বাংলাদেশে সবেচেয়ে বেশি আগুন লাগে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে তারপর ২য় সর্বোচ্চ কারণ হলো এই চুলার আগুন বা রান্না করতে গিয়ে আগুন লাগিয়ে ফেলা।

এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসিম।

তার দেওয়া ওই স্ট্যাটাসটি যুগান্তর পাঠকদের জন্য তোলে ধরা হলো-

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এর ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চুলার আগুন থেকেই ৩৫৬৪টি আগুনের সূত্রপাত হয়। যা শতকরা ১৬.৯১ শতাংশ। সারাদেশে এই আগুন থেকে ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদ। কিন্তু এই চুলার আগুন কিছু পূর্ব সতর্কতা ও সচেতন হলেই বিশাল পরিমাণে কমিয়ে আনা যায়। তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে গ্রাম ও শহরে এই রান্নাঘরে আগুনের কারণ ও ধরণ ভিন্ন ভিন্ন। বিশ্বে রান্নাঘরের ভোজ্য তেলের আগুনের গুরুত্ব এতোটাই বেশি যে এটাকে আগুনের শ্রেণিবিভাগে (এফ শ্রেণি) অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এর জন্য আলাদা ফায়ার এক্সটিংগুইসারও (ওয়েট কেমিকেল) তৈরি করা হয়েছে। আমার লেখায় চেষ্টা করবো গ্রাম ও শহরের দুইরকম রান্নাঘরের আগুনের ঘটনার প্রতিকারে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা।

শরীরের পোশাক: রান্না করার সময় অবশ্যই ফিটিং পোশাক পড়ুন। বেশি ঢিলে পোশাক পড়লে অসাবধানতায় পোশাক আগুনের সাথে লেগে অথবা কাপড় গরম হতে হতে এক সময় পোশাকে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই রান্না ঘরে ফিটিং পোশাক পড়ুন।

রান্নার স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখা: চুলার আশে পাশে সবসময় পরিষ্কার রাখুন। যেসব দাহ্যবস্তু কম তাপে আগুন লেগে যায় তা দূরে রাখুন। চুলার পাশে এলোমেলোভাবে নোংরা জিনিসপত্রসহ রান্নার সরঞ্জাম রাখবেন না। যত ধরনের কাঠের রান্না করার সরঞ্জাম আছে তা স্টোভ/ বার্নারের কাছ থেকে ১ মিটার/৩ ফুট দূরে রাখুন। এমনকি চুলা, বার্নার, স্টোভ রান্না করার পরপরই পরিষ্কার করে রাখুন।

বাজারের ব্যাগ, রান্না করার হ্যান্ড গ্লোভস, তোয়ালে, প্লাস্টিক, কাগজ, খাবারের সাথে নিয়ে আসা প্যাকেট এরকম সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। এছাড়া রান্নাঘর যেনো বদ্ধ না হয়ে প্রচুর পরিমাণে বাতাস চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করুন। রান্না শুরুর আগে ও করার সময় অ্যাডজাস্ট ফ্যান চালু রাখুন।

রান্নাঘর স্টোর নয়: গ্রাম কিংবা শহরের চিত্র একইরকম। রান্নাঘরকে স্টোর রুম করা হয়। এতে করে আগুন লাগার ঝুঁকি থেকে যায়। এখনকার রান্না ঘরে জিনিষপত্র রাখার জন্য আলাদা তাক থাকে সেখানে স্টোর করা হয়। রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া স্টোর না করাই ভালো। এছাড়া গ্রামে রান্না ঘরগুলো উপরে টিন চারপাশে পাটখরি দিয়ে তৈরি করা হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে চুলা পাটখরির বেড়ার খুব কাছে বানানোর কারণে প্রায়ই বেড়ায় আগুন লেগে যায়। এছাড়া চুলার কাছেই রান্না করার খড়িগুলো রাখা হয়।

এমনও হয় কাচা খড়িগুলো চুলার কাছে রেখে শুকানো হয় যা আগুনের সূত্রপাত করে। এছাড়া দেখা গেছে খড়িগুলো রান্নাঘরের উপরের মাচায় রাখা হয়। দিনে দিনে তাপ পেতে পেতে একসময় এখানে আগুন লাগে। এছাড়া রান্না করতে গিয়ে আগুনের ফুলকি উপরে উঠে খড়িতে আগুন লাগারও ঘটনা ঘটেছে।

সচেতন অবস্থায় রান্না: ঘুম ঘুম ভাব বা অ্যালকোহল পান করে রান্না করবেন না। সতর্ক অবস্থায় রান্না করুন। কোন ওষুধ নেয়ার কারণে ঘুম ঘুম লাগলে রান্না করতে যাবেন না। ক্লান্তি নিয়েও রান্না করবেন না।

রান্নাঘরেই থাকুন: যতক্ষণ রান্না করবেন ততক্ষণই রান্না ঘরে থাকুন। এমন দূরত্বে যাবেন না তাতে দুর্ঘটনা ঘটলে বুঝতে পারবেন না। যদি কোথাও যেতে হয় তাহলে স্টোভ/চুলা বন্ধ করে যান। কোনভাবেই চুলায় রান্না বসিয়ে অন্য ঘরে কোন কাজ করবেন না। এখন পর্যন্ত রান্নাঘরে রান্না বসিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি আগুনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরকমও হয়েছে পানি গরম করতে দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়ায় পানি গরমের কথা মনে নেই। এদিকে তাপে পানি শুকিয়ে পাতিল ওভার হিটেট হয়ে আগুন লেগেছে। রান্না বসিয়ে শিশুদের পড়ানো, টিভি দেখ

, মোবাইলে কথা বলার কারণে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটেছে। গরম কালে রান্না করতে গিয়ে গরম লাগায় অন্য ঘরে গিয়ে ফ্যানের বাতাস নিতে গিয়েও চুলার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি রান্নাঘরের চুলা থেকে পিঠা নিয়ে ঘরের ভিতর রেখে আসতে গিয়ে এরই মধ্যে আগুন লেগে গেছে। আরও দেখা গেছে রান্না বসিয়ে গোসল করতে যাওয়া, ঘরের পাশের মাঠে গরু ছাগল আনতে যাওয়া, শিশুদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটেছে। আবার এরকমও হয়েছে মা চুলার কাছে শিশুকে বসিয়ে রেখে অন্য কাজে গিয়েছে এদিকে শিশু আগুন লাগিয়ে ফেলেছে। তাই যতক্ষণ রান্না করবেন ততক্ষণ সতর্ক থাকুন এবং রান্না ঘরেই থাকুন। কোথাও যেতে হলে চুলা বন্ধ করে যান।

প্যান বা কড়াইতে আগুন: যদি প্যান বা কড়াইতে আগুন লেগে যায় যায়। মাথা ঠান্ডা রাখুন। ঢাকনা দিয়ে প্যান/কড়াই ঢেকে দিন। যতক্ষণ না পাতিল ঠাণ্ডা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঢেকেই রাখুন। কোনভাবেই প্যান বা কড়াই বার্নার/চুলা থেকে টান দিয়ে ফেলে দেয়া বা সরাবেন না। এতে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

প্যান/কড়াইতে তেলে আগুন লাগলে: যদি কড়াইতে তেলের জন্য আগুন লাগে কোনভাবেই পানি দিবেন না। তাহলে আগুন আরো বেড়ে যাবে। তেলের আগুনে পানি দেয়ার ভুলটাই বেশি পরিমাণে করা হয়। এটা না করে প্রথমেই ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন তারপর বার্নার বন্ধ করে দিন বা চুলা থেকে খড়ি সরিয়ে ফেলুন। এছাড়া কড়াইতে বেকিং সোডা দিতে পারলে আগুন নিভে যাবে।

যদি আগুন একটু বড় হয়ে যায় তাহলে ভিজা কোন কম্বল দিয়ে পুরো বার্নার বা চুলাটাকে ঢেকে দিন। বর্তমানে বাজারে ফায়ার ব্লাংকেট পাওয়া যায় তা কিনে রাখতে পারেন। আগুনের উপর ঢেকে দিলে আগুন নিভে যাবে। তবে আগুন আরো বড় হয়ে গেলে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিন। তেল অতিরিক্ত তাপে কখনই রান্না করবেন না। তেলে অতিরিক্ত তাপ দিলে প্রথমে ধোয়া তারপর ধপ করে আগুন ধরে যায়।

কী রান্না করছেন খেয়াল রাখুন: কী রান্না করছেন তা খেয়াল রাখুন। মাঝেমাঝে তা চেক করুন। ওভার হিটসহ অন্যান্য বিষয় খেয়াল করুন। আপনি সচেতন না থাকলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শহর কিংবা গ্রামে দেখা যায় আড্ডা দিতে দিতে রান্না করে। এতে মনযোগ/ সচেতনতায় ঘাটতি তৈরি হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। মনে রাখবেন আগুন লাগলে শুধু আপনারই ক্ষতি হচ্ছে না আপনার প্রতিবেশীরও ক্ষতি হচ্ছে যার দায়ভার তার ছিল না।

ওভেনে আগুন: ওভেনে অবশ্যই ডিরেক্ট লাইন ব্যবহার করুন। এক্সটেনশন লাইন ব্যবহার করলে ওভারলোড হয়ে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে যেতে পারে। ওভেনে আগুন লাগলে প্রথমেই ওভেনের ইলেকট্রিসিটি লাইন বন্ধ করে দিন। কোনভাবেই দরজা খুলবেন না যতক্ষণ না আগুন নিভে না যায়। এরপর সার্ভিস না করা পর্যন্ত কোনভাবেই আবার চালু করবেন না। মাইক্রোওভেনে কখনই অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা মেটাল অবজেক্ট ব্যবহার করবেন না। যখন খাবার ওভেন থেকে বের করবেন অবশ্যই সাবধানে বের করবেন। তা না হলে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

গ্রিল করার সময়: হোটেল বা যেখানেই গ্রিল করবেন অবশ্যই সচেতনভাবে কাজ করুন। যদি গ্যাস দিয়ে গ্রিল করেন তাহলে প্রথমেই দেখে নিন সিলিন্ডারে কোন লিক আছে কিনা। বারান্দায় কখনও গ্রিল করবেন না। কোন খোলা এলাকায় করবেন। তবে আশেপাশে কোন কিছুতে আগুন লেগে যেতে পারে এমন দাহ্যবস্তু দূরে রাখুন। এমন স্থানে গ্রিল করবেন না যেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে বা এমন জায়গায় যেখানে মানুষের আনাগোনা খুব বেশি। যেমন খেলার মাঠ, বাজার, রাস্তার পাশে। কয়লা/কাঠ ব্যবহার করলে অবশ্যই অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। রান্না করার পর খুব ভালোভাবে আগুন নির্বাপণ করে রাখতে হবে। যতক্ষণ গ্রিল করবেন ততক্ষণই সচেতন থাকবেন।
শিশু/পালিত পশু পাখি দূরে রাখুন: শিশুদের রান্না ঘর থেকে দূরে রাখুন। কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে রাখুন। রান্না করার সময় বা গরম পানি বা গরম অন্য কিছু বহন করার সময় শিশুদের কোলে রাখবেন না। এছাড়া শিশুদের জানান কোনটি গরম, কোন কাজে ঝুঁকি রয়েছে। এরকম হয়েছে শিশুকে চুলার কাছে রেখে পরিবারের সদস্য অন্য কাজে গিয়েছে এদিকে শিশু চুলা থেকে খড়ি নিয়ে অন্য কিছুতে লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু এই শিশুদের আগুন নিয়ে খেলার কারণে ২০২০ সালে ৭২০টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়।

ফুডকোর্ট/ হোটেলের রান্না ঘরে আগুন: বেশিরভাগে হোটেল/ফুডকোর্টে আগুন লেগেছে এই রান্নাঘর থেকে। দেখা গেছে হোটেল/ফুডকোর্টের রান্নাঘরটি থাকে একরকম স্টোরের মতো। রান্নাঘর থাকতে হবে একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। চুলা/বার্নারের কাছে কোন দাহ্যবস্তু রাখা যাবে না। স্টোর কাম রান্নাঘর করা যাবে না। ফুডকোর্টের প্রতিটি দোকানেই থাকে গ্যাস সিলিন্ডার। এই গ্যাস সিলিন্ডার কেনার সময় অবশ্যই সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখে কিনতে হবে। গ্যাসলাইনের পাইপে কোন লিকেজ আছে কিনা তা চেক করতে হবে। তা না হলে এক একটি দোকান হবে এক একটি গ্যাস বোমা।

এছাড়া যতক্ষণ রান্না করবেন ততক্ষণই সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় হোটেলগুলোতে গ্যাসের চুলা একটু কমিয়ে পানি গরম করা হয় আর এটা দিন রাত চলতে থাকে। এটা করা যাবে না এতে আগুন লাগার ঝুঁকি থেকে যায় প্রবল। গ্রামের হোটেলগুলোতে দেখা গেছে রাতে কাচা খড়ি/কাঠ শুকানোর জন্য চুলার উপরে রেখে দোকান বন্ধ করে চলে যায়। এরপর এখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

এব্যাপারে খুবই সাবধান হতে হবে খড়ি শুকানোর এ কাজ করা যাবে না। হোটেল/ফুড কোর্টে বেশিরভাগ আগুন লাগে তেলের আগুন থেকে। কড়াইতে খুব তাপে তেল গরম করতেই আগুনের সূত্রপাত হয়। রান্নাঘরে অবশ্যই ডিসিপি ও ভোজ্য তেলের আগুনের জন্য ওয়েট কেমিকেল ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখা প্রয়োজন।

গ্যাসের চুলা ব্যবহারের সাবধানতা: এখন গ্রাম কি শহর প্রায় বাসাতে গ্যাস সিলিন্ডার বা গ্যাসের লাইন নিয়ে রান্না করা হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে গ্যাস অতিরিক্ত বাড়িয়ে তারপর বার্নারে আগুন দেয়া হয়। এতে হুট করেই বড় আগুনের সূত্রপাত হয়। এজন্য কম বাড়িয়ে তারপর আগুন দিন। এব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া দেখা যায় শীতের সময় গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রেখে ভিজে কাপড় শুকানো হয় যা কোনভাবেই করা যাবে না।

গ্যাসের চুলাতে আগুন লাগার বড় একটি কারণ এই কাজটি। আরও দেখা গেছে কোন একটি পদ রান্না শেষ হলে অন্য একটি রান্নার মাঝের সময়ে গ্যাসের চুলাটি কমিয়ে জ্বালিয়ে রাখে। অনেক সময় একটি ম্যাচের কাঠি ব্যবহারের অনিচ্ছা ও অলসতা থেকেই চুলা জ্বলতেই থাকে। এরপরে অসাবধানতার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটে।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে আগুন: অনেক সময় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের ও অপরের রান্না ঘরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে। যা কাম্য নয়। এব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।

উত্তপ্ত ছাই/কয়লা: গ্রামে দেখা গেছে মাটির চুলা কয়লা বা ছাইয়ে ভরে গেলে তা তুলে চুলার পাশেই রাখা হয় যা আগুন লাগার কারণ হিসেবে দেখা গেছে। এরকম হয়েছে যে, উত্তপ্ত ছাই রেখেছে ছোট শিশুরা সেখান থেকে আগুন নিয়ে অন্য কিছুতে লাগিয়ে দিয়েছে। ২০২০ সালে সারাদেশে এই উত্তপ্ত ছাইয়ের কারণে ৫৪৫ টি আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্ষতি হয় ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সম্পদ।

চিমনির স্ফুলিঙ্গ: অনেক সময় রান্না ঘরের চিমনির স্ফুলিংগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সারাদেশে গত ২০২০ সালে চিমনির স্ফুলিংগ থেকে ৩৩ টি আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্ষতি হয় ২৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার সম্পদ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

রান্না ঘরে ঢুকে নাক ব্যবহার: সৃষ্টিকর্তা আমাদের অসাধারণ একটি উপহার দিয়েছেন সেটা হলো আমাদের নাক। চুলার আগুন প্রতিরোধে এই নাকটি ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন পর ঘরে ঢুকে বা রান্না ঘরে ঢুকে যদি গ্যাসের গন্ধ পান কোনভাবেই বৈদ্যুতিক সুইচ ব্যবহার করবেন না। বা গ্যাসের চুলায় আগুন দিবেন না। সবসময় সবার আগে ঘরে/রান্না ঘরের দরজা, জানালা খুলে দিন। বাতাস চলাচল করুন কমপক্ষে ৫ মিনিট। দীর্ঘদিন পর ঘরে ঢুকে জানালা দরজা খুলে দেয়াটা অভ্যাসে পরিনত করুন।

আগুন বড় হলে: আগুন বড় হয়ে গেলে দ্রুত রান্না ঘরের দরজা বা ফ্লাটের দরজা বন্ধ করে বের হয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসকে কল করুন। ভবনের অন্যান্যদের জানান যে আগুন লেগেছে যাতে সবাই বের হয়ে আসতে পারে। বের হওয়ার সময় মূল্যবান জিনিসপত্র নেয়ার চেস্টা করবেন না। এতে বের হতে দেরি হয়ে যেতে পারে।

গায়ে আগুন লেগে গেলে: কোনভাবেই দৌড়াদৌড়ি করবেন না। শুয়ে পড়ুন, দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে গড়াগড়ি করতে থাকেন যতক্ষণ না আগুন নিভে না যায়। যদি আপনি দেখেন কারো গায় আগুন লেগেছে, ভিজে কোন কম্বল দিয়ে তাকে মুড়িয়ে দিন। যদি শরীরের কোন অংশ পুড়ে যায় তাহলে ৩-৪ মিনিট ঠান্ডা পানি ঢালুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কিচেন ফায়ার সাপ্রেশন সিস্টেম: বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের কারণে পুরো কিচেন ও শুধু বার্নারের চারপাশে আগুন নির্বাপনের যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়। যা নির্দিস্ট তাপমাত্রা পেলেই অটোমেটিক আগুনের উপর ওয়েট কেমিকেল ছিটিয়ে আগুন নির্বাপন করে। এটি আগুন নির্বাপনের ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা তবে অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া স্মোক ডিটেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে।

এস্কেপ প্লান: কখনও যদি রান্নাঘরে/ঘরে আগুন লেগে যায় আর যদি ঘর থেকে বের হয়ে আসতে হয় তাহলে কিভাবে দ্রুত কোন পথ দিয়ে বের হয়ে আসবেন তা আগেই ঠিক করা রাখবেন। পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে এই বের হওয়ার কাজটি দিনে/রাতে মাঝে মাঝে প্রাকটিস করুন। এছাড়া পরিবারের সবাইকে ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দিন। পরিবারের বয়স্ক লোকদের কিভাবে বের করবেন, কে কি কি কাজ করবে তা ঠিক করে দিন। মাঝে মাঝে তা নিয়ে আলোচনা করুন।

সচেতনতাই পারে এই রান্নাঘরের বা রান্না করতে গিয়ে আগুনের ঘটনা কমিয়ে আনতে। এছাড়া যেকোন দুর্ঘটনায় কল করুন ফায়ার সার্ভিস কে। আবারও বলছি আপনার অসচেতনার জন্য অপরের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে যার দায়ভার তার ছিল না।

কলমকথা/রোজ